Charukala Shilpo Niketan

Art and Craft School

Friday, May 1, 2020

ভারতীয় চিত্রশিল্পী রাজা রবিবর্মা'র জীবনী।

ঊনবিংশ শতাব্দীর জনপ্রিয় ভারতীয় শিল্পী রাজা রবিবর্মা।

                     ভারতবর্ষ ব্রিটিশ দখলে আসার পর ভারতীয় চিত্রকলায় ইউরোপীয় রীতি-পদ্ধতির প্রভাব পড়তে শুরু করে। সেই সময়ের রাজা রবিবর্মাই ইউরোপীয় রীতি-পদ্ধতির সবচেয়ে বেশি পারদর্শী হয়ে ওঠেন। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগ থেকে বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগ পর্যন্ত সবচেয়ে জনপ্রিয় শিল্পী ছিলেন তিনিই। 
                     ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দের ২৯শে এপ্রিল কেরলের রাজধানী ত্রিবান্দ্রামের ২৪ মাইল দূরে কিলিয়াঙ্গা শহরে এক জায়গীরদার পরিবারে তার জন্ম হয়। জায়গীদির পরিবার হিসাবে ত্রিবাঙ্কুর রাজ পরিবারের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। ত্রিবাঙ্কুর রাজা ১৩ বছেরর রবি বর্মার অংকন প্রতিভা দেখে মুগ্ধ হন। এই সময় তিনি প্রাচীন ভারতীয় পদ্ধতিতে জল রঙের ছবি আঁকতেন। 
                     ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে আঠারো বছরের রবিবর্মার সঙ্গে ত্রিবাঙ্কুর রাজা তাঁর বড় রানীর ছোট বোনের বিবাহ দেন। রাজ পরিবারের রীতি অনুযায়ী রাজ পরিবারের সব স্ত্রী পুরুষকেই রাজা বা রানী নামে ডাকা হতো। সেই দিক থেকেই রবিবর্মা রাজা রবি বর্মা নামে পরিচিত হন। ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে রাজা ইংরাজ চিত্রকর থিয়োডর জেনসনকে তার অঙ্কন শিক্ষক হিসাবে নিযুক্ত করেন। জেনসন রবিবর্মা ইউরোপীয় পদ্ধতিতে তেল রঙে ছবি আঁকা এবং মডেল বসিয়ে লাইভ স্টাডি শুরু করেন। ১৯৭৩-১৯৮০ সাল পর্যন্ত পরপর তিনবার তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে স্বর্ণপদক পান। তার মধ্যে মাদ্রাজ ফাইন আর্টস সোসাইটিতে তিনি গর্ভনরের সোনার মেডেল পান। ত্রিবাঙ্কুর রাজা রবিবর্মা ও গাইকোয়াড মহারাজার কাছেও স্বর্ণপদক লাভ করেন। এই সময়ে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও তিনি লাভ করেন। চিকাগো ইন্টার্নেশনাল এগজিবিশনে তিনি ভারতীয় জীবনের আঠারোখানি চিত্র পাঠিয়ে প্রশংসা লাভ করেন। 
                     ১৮৭৫ সালে যুবরাজ সপ্তম এডওয়ার্ড ভারত ভ্রমনে এসে ত্রিবাঙ্কুর রাজার কাছ থেকে রবিবর্মার আঁকা কয়েকখানি চিত্র উপহার পান। ছবিগুলো দেখে তিনি এত মুগ্ধ হন যে চিত্রকরকে সম্মুখের ডেকে তিনি তার প্রশংসা করেন। গায়কোয়াড় এর নতুন রাজপ্রাসাদে সাজানোর জন্য তিনি রামায়ণ-মহাভারতের ১৪টি তৈলচিত্র অঙ্কন করেন - যা তাকে খ্যাতির উচ্চ শিখরে স্থাপন করে। এই সমস্ত চিত্রের প্রতিলিপির জন্য দাবি ও তার বিপুল চাহিদা দেখে রবিবর্মা লিথো প্রেস করে তার ছবি ছাপতে থাকেন। যদিও ছাপা ছবিগুলোর সঙ্গে চিত্রের বর্ণসঙ্গতি থাকতো না।  কারণ তখন ব্লক বা ছাপা ততটা উন্নত ছিল না। বাংলা রামায়ণ মহাভারত বইতে রবি বর্মার অনেক চিত্র এখন বর্তমান। 
                     তাঁর বিখ্যাত ছবিগুলোর মধ্যে নায়ার লেডি এক্ট টয়লেট, শকুন্তলার চিত্রলিখন, সীতার পরীক্ষা, রামের সমুদ্র শাসন, হরধনু ভঙ্গ, পক্ষচ্ছেদ, কৌরব সভায় শ্রীকৃষ্ণ, লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণপতি, দশরথের শোক, গঙ্গাবতরণ বিখ্যাত। স্বামী বিবেকানন্দ ও ভগিনী নিবেদিতার সংস্পর্শে তিনি আসেন। এবং রামকৃষ্ণ মিশনের প্রতীক চিহ্নটি তাঁর একটি শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক। 
                     যুগস্রষ্টা এই শিল্পীর শৈল্পিক প্রথম বিদেশী প্রবর্তন রূপে তার কিছু ত্রুটি থাকা ছিল খুবই স্বাভাবিক। তার প্রাণী চিত্রগুলি ত্রুটিপূর্ণ চিত্রগুলি পশ্চাদপট রচনায় তিনি উন্নতমানের পরিচয় দেননি এবং তার উজ্জ্বল রঙের ছবিগুলো সৌন্দর্য এর ব্যাঘাত ঘটিয়েছেন। ১৯০৬ সালে ২রা অক্টোবর এই জনপ্রিয় শিল্পীর মৃত্যু হয়।